শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩

স্বাধীনতার মাসেই নগর যুবলীগের কমিটি, প্রাধান্য পাচ্ছে ত্যাগ ও ক্লিন ইমেজের নেতা

প্রকাশিত: বুধবার, মার্চ ১৫, ২০২৩

নগর প্রতিবেদক::

নানা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মহান স্বাধীনতার মাসে ঘোষণা আসছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি। আর নেতৃত্বে আসছেন ক্লিন ইমেজের কর্মী বান্ধব ও সাংগঠনিক নেতারা। দলীয় অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং জিইয়ে থাকার সম্ভাবনা অনেকাংশে থাকবে না ঘোষিত কমিটিতে।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, সম্মেলনের দীর্ঘ মাস চললেও কমিটি না দেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সঠিক নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্য। সম্মেলন ঘিরে অনেক পদপ্রত্যাশী নেতা বড় বড় শোডাউন দিলেও এ সময়ে এসে তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। পদ পদবীতে আসার জন্য স্লোগান আর শোডাউন দিলেও দলের প্রতি যেমন আন্তরিক ছিল না তেমন ছিল মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়তা। ফলে সে সব বিষয় মাথায় রেখে কমিটি ঘোষণা করা হবে। যারা মাঠ আঁকড়ে ধরে আছেন, যাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই তাদের প্রাধান্য দিয়েই কমিটি হবে।

শেষ সময়ে যে ক’জনের নাম শোনা যাচ্ছে সেখানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এম এ মান্নানের ছেলে নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলম, যুবলীগের সাবেক সদস্য ও সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস দেবাশীষ পাল দেবু।

এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেম নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সদস্য ও কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিদারুল আলম, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেবাশীষ পাল দেবুকে কোন ভাবে বাদ দিয়ে কমিটি করার পরিকল্পনা নেই। সম্মেলনের আগে ও পরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি এককভাবে পালন করে প্রশংসিত হয়েছেন। ফলে কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দিদারুল আলম দিদার-দেবাশীষ পাল দেবু। ‘দেবু-আজিম’ ও ‘দিদার-আজিম’। এই তিন ফরম্যাট থেকে যে কোন এক ফ্যারমেটে নগর যুবলীগের কমিটি ঘোষিত হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদের মধ্যে মান্নানপুত্র দিদারুল আলম দৃশ্যত কোন নেতার অনুসারী না হলেও তার প্রতি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে।

অন্যদিকে দেবাশীষ পাল দেবু বন্দর পতেঙ্গা আসনের এমপি আব্দুল লতিফের সঙ্গে রাজনীতি করলেও সিটি কলেজ কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে নগর রাজনীতিতে সিটি ব্লকের সঙ্গেও সম্পৃক্ত তিনি। গত কয়েক বছর ধরে দেবুর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সিটি মেয়র রেজউল করিম চৌধুরীও উপস্থিত থাকছেন। যদিও কোন গ্রুপিং রাজনীতিতে নেই দেবু।

অন্যদিকে এম আর আজিম সরাসরিই সাবেক মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরীর হাত ধরে ছাত্র রাজনীতি করায় এখন তিনি মহিউদ্দীন পুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বলয়ে থেকে রাজনীতি করছেন।

এরআগে নভেম্বরে দক্ষিণের সঙ্গে আবার জানুয়ারিতে উত্তর জেলার কমিটি ঘোষণার সময় মহানগরের কমিটি ঘোষণার কথা চাউর হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেটি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন পদ প্রত্যাশীরা।

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটিতে সভাপতি পদে ৩৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৫ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে শীর্ষ দুই পদের জন্য চার জনের নাম চূড়ান্তও করেছেন যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

উত্তরে ৩২ সদস্যের আর দক্ষিণে ৩৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষিত হলেও মহানগরে ২০ থেকে ২১ জনের কমিটি ঘোষিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। তবে সিভয়েস যুবলীগ চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ট একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানার চেষ্টা করেছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদে ৩৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৫ জন প্রার্থী তাদের সিভি জমা দিয়েছেন। তবে সেখান থেকে শীর্ষ দুই পদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন, সাংগঠনিক দক্ষতা, ঢাকার সঙ্গে নিবিঢ় যোগাযোগ ও স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের সুপারিশ এবং যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিবেচনার ওপর ভিত্তি করে চারজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকেই সভাপতি ও সেক্রেটারি ঘোষণা করা হতে পারে।

তুখোড় দুই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেবাশীষ পাল দেবু ও এম আর আজিম নগরে আওয়ামী রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। দুজনই রাজনীতিতে সমসাময়িক। ৪৬ বছর বয়সী দেবাশীষ পাল দেবু সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রসংসদের সাবেক জিএস ছিলেন। আর ৪৮ বছর বয়সী এম আর আজিম দীর্ঘ ১০ বছর নগর ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুজনেরই ছাত্রলীগে ও যুবলীগে বিপুল অনুসারী রয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগের কারণেই ৯৮ প্রার্থীর মধ্যে আজিম-দেবু সেক্রেটারি পদের জন্য আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করছেন।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয়েছিল। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার অনুষ্ঠিত যুবলীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারেননি কাউন্সিলররা। কমিটির বিষয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন শেষ হয়েছিল।

ওই দিন অধিবেশনে সভাপতি পদে ৩৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক ৬৫ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয় একজন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করার জন্য। কিন্তু দুই পদের প্রার্থীরা সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। এসময় কাউন্সিলদের উদ্দেশে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছিলেন, ‘আপনারা আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। কেন্দ্র থেকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হবে।’

এরআগে গত ২৬ মার্চ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটির জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হলে মোট ১০৫ জন সিভি জমা দিলেও পরে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে পর ৯৮ জন শীর্ষ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সর্বশেষ