মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, মে ৪, ২০২১
মুহিবুল্লাহ মুহিব, কক্সবাজার:
কক্সবাজার শহরের জেল গেইট এলাকার শাহ আলম (২৫)। চোখে দেখতে পান না দীর্ঘদিন ধরে। কয়েকবার অপারেশনের পরও আলো দেখার সুযোগ হয়নি শাহ আলমের। কিন্তু গেল ২৬ মার্চ জেল গেইট এলাকায় ঘটে যাওয়া অপহরণ চেষ্টা মামলায় রহস্যজনকভাবে আসামী করা হয়েছে এ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিকে। মামলা হওয়ার পর থেকে কয়েকদফা পুলিশি হয়রানী শিকার হওয়ার অভিযোগ তার পরিবারের।
গেল ২৭ মার্চ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অপহরণের শিকার যুবকের বড় ভাই রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকার রশিদ আহমেদের ছেলে রাহমাত উল্লাহ বাদী হয়ে তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণ করার পর মুক্তিপণ দাবী করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় কক্সবাজার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার মৃত ইসমাঈলের ছেলে মো. ইউসূফকে (২৫), সদর উপজেলার ঝিলংজা পাওয়ার হাউজ এলাকার মো. আলমগীরের ছেলে মো. শাহীন (২২) ও শাহ আলমকে (২৫) তিন নম্বর আসামী করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গেল ২৬ মার্চ দুপুর ১২ টার দিকে রামুর মিঠাছড়ি থেকে বাদী রাহমাত উল্লাহর ভাই সাইদুজ্জামান আরিফ (১৭) তার দুই বন্ধু রফিকুল ইসলাম শাহেদ ও জুনায়েদ আল হাবীব জার্সি কেনার জন্য কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে সিএনজি অটোরিক্সাযোগে রওনা হয়। প্রতিমধ্যে জেল গেইট এলাকায় পৌছালে তাদের গাড়ী নষ্ট হয়ে যায়। সে সুবাধে তারা গাড়ী থেকে নেমে নাস্তা করা জন্য একটি দোকানের সামনে যায়। সেখান থেকে বের হওয়ার পথে এক নং আসামী ইউসূফ ডাক দেয়। তারা দাড়ালে হঠাৎ ৮/১০ একই বয়সী ছেলে ছুরি, চাকু নিয়ে হাজির হয়। এ তিনজনকে তারা বামপাশের একটি পাহাড়ে নিয়ে যায়। ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে এক পর্যায়ে পৃথক পৃথক ভাবে ভুক্তভোগী তিনজনের পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। পরে স্বজনরা মুক্তিপন দিতে রাজি হওয়ায় ওইদিন রাত ৯ টার দিকে সাইদুজ্জামান ও জুনায়েদ আল হাবীবকে ইজিবাইকে তুলে দেয়া হয়। পরে অপর ভিকটিম রফিকুল ইসলাম শাহেদকে নিয়ে লিংরোড এলাকায় গেলে সেখানে তার বোন জেসমিন আক্তারের কাছ থেকে মুক্তিপন বাবদ টাকা নিতে গেলে স্থানীয়রা ইউসূফকে আটক করে। পরে সদর মডেল থানা পুলিশ ২নং আসামী মো. শাহীনকে গ্রেফতার করে।
এজাহারের কোথাও অপহরণের ঘটনার সঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি শাহ আলমের সম্পৃক্ততার কথা বলা না হলেও পরে দুই নং আসামী শাহিনকে গ্রেফতারের সময় শাহ আলম পালিয়ে যায় বলে উল্লেখ্য করা হয়।
এদিকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি শাহ আলমের পরিবারের দাবি, পুলিশ আসলে সবাই ছোটাছুটি করে। সেও সেয় জায়গা থেকে হয়তো দৌড়ে থাকতে পারে। আসামীদের কারও সঙ্গে শাহ আলম বা তার পরিবারের কোন পরিচয় নেয়। যে চোখে আলো দেখতে পায় সে কি করে অন্যজনকে অপহরণ করবে..?
শাহ আলমের বাবা শামসুল আলম বলেন, শাহ আলম ২০১৭ সাল থেকে সরকারীভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি ভাতা পেয়ে আসছে। কোনদিন বড় করে কথা বলার সাহস যার নেয় তাকে অপহরণের অভিযোগে আসামী করা হয়েছে। এটা কোন দেশে বসবাস করছি আমরা। রাতে আধারে পুলিশ এসে আমার বাড়ির দরজা ভেঙে তল্লাশীর নামে হয়রানী করছে।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে টাকা দাবি করা হয়। আমরা সেটা দিতে অনিহা প্রকাশ করি। এলাকায় পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত জাহেদা বেগমও কয়েক দফা টাকা দাবি করে। তাও আমরা দেয়নি। হয়তো তারা আমার অন্ধ ছেলেটাকে আসামী করে আমাকে হয়রানী করছে। এ অবিচারের একটা সুবিচার দাবি করছি।
শাহ আলমের বড় ভাই শাহাব উদ্দিন বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে শাহ আলমের খোঁজের অজুহাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন বাড়ির দরজা ভেঙে প্রবেশ করে আমি আমার পরিবার নাকি জাল টাকার ব্যবসা করি। আমাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে হুমকি দেয়। পরে আমার স্ত্রীসহ সবাইকে নানাভাবে গালিগালাজ করে চলে যায়। অন্যায়ভাবে আমার ভাইকে আসামী করার পর উল্টো পুলিশ আমাদের হয়রানী করছে। এ টার একটা সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন বলেন, শাহ আলম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হলেও সে বড় মাফিয়া ওই এলাকার। এ মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হলে কি অপরাধ করবে না তা কি করে হয়।
তাই বলে অপহরণ কি করে করবে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই আলমগীর বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামীরা তার নাম বলেছে তাই আসামী করা হয়েছে। শাহ আলমের পরিবারের লোকজনকে হুমকি দেয়ার অভিযোগটিও অস্বীকার করে পুলিশের এ কর্মকর্তা।
বিষয়টি নজরে আনা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি এখনো তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে শেষে বলা যাবে কে আসামী আর কে নয়। যেহেতু সে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি আমরা এখন জানলাম। এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি।