বুধবার, ৩১ মে ২০২৩

সভ্যতা নির্মাতাগণের প্রতি স্বশ্রদ্ধ সালাম

প্রকাশিত: রবিবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৩

পড়ন্ত বিকেল, অলস বসে বারান্দায়। সূর্যের চোখ রাঙানো কমার সাথে সাথে তীব্র তাপদাহ কিছুটা কম অনুভূত হচ্ছে। পূর্ব ও দক্ষিণ পাশ জুড়ে কর্ণফুলী পরম মমতায় কিছুটা শীতল পরশ দেয়ার চেষ্টা করে চলছে। মাছ ধরা ছোট ছোট ট্রলার গুলো নোঙ্গর করে রাখায় মনে হচ্ছে যেন কর্ণফুলীর বুকে অসংখ্য ঘর বেধেঁছে কোন যাযাবরের দল।

হঠাৎ লক্ষ্য করলাম চারপাশের নিস্তব্ধতা! নির্মাণ শ্রমিকদের হাতুড়ি শাবলের টুংটাং শব্দ নেই, নেই ছাদ ঢালাইয়ের কর্ম চঞ্চলের হৈ হৈ রব। চারপাশ একেবারে নিস্তব্ধ।

মুলত ঈদের অবকাশে সভ্যতার প্রতীক নগর বিনির্মানের নির্মাতারা একটু কর্ম বিরতিতে আছে, তাই এই নিস্তব্ধতা। আশপাশে চোখ মেলে যতদূর দৃষ্টি সীমা ততদূরে উঁচু উঁচু ইমারত, পিচ ঢালা রাস্তা এ সব কিছুই নির্মিত হয়েছে হাজার হাজার শ্রমিকের রক্ত ঘাম করা শ্রমের বিনিময়ে, কখনো কখনো বা তাদের জীবনের বিনিময়ে।

প্রকৃতপক্ষে শ্রমিকের শ্রম ছাড়া এই সভ্যতা গড়ে উঠতো না, অথচ সেই শ্রমিকরাই সমাজের সবচেয়ে বেশি অবজ্ঞা আর অবহেলার শিকার। তাদের ন্যয়্য পারিশ্রমিক থেকেও তারা বঞ্চিত।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সমাজে শ্রমিকের অবস্থান কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন…

“দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি বলে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে!
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল??…………..
তুমি জান না’ক, কিন্তু পথের প্রতি ধুলি কনা জানে,
ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!

মূলত শ্রমিকদের নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমই জাতি গঠনে সাহায্য করেছে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া প্রতিটি উন্নয়নই অসম্পূর্ণ। তাই তো মেহমত মুরাত ইলিদান বলেছেন… “হঠাৎ যদি পুরো বিশ্বের সব শ্রমিক অদৃশ্য হয়ে যায় তবে বিশ্ব থমকে যাবে!” সকলেই উচিৎ এটি অনুধাবন করা এবং শ্রমিকদের সম্মান করা– এই দুর্দান্ত মানুষরাই আমাদের বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে..!

প্রতিবছর ১লা মে বিশ্বব্যাপী “মে দিবস” পালিত হয়, কিন্তু এ দিবসের তাৎপর্য খুবই কম উপলব্ধি করা হয়। শ্রমিকরাও যে মানুষ,তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন,তাদের ন্যয়্য পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধা প্রপ্তি তাদের অধিকার আর প্রদান করা সমাজের উচুঁ শ্রেণির মানুষের কর্তব্য। এই অধিকার ও কর্তব্যের বাস্তবায়নই সমাজকে করতে পারে বৈষম্যহীন,সুখী, সুন্দর। তখনই কেবল মে দিবস পালন সার্থকতা লাভ করবে।

মনে রাখা প্রয়োজন যে, দেশ গঠনে কর্ম বিমুখ ১জন শিক্ষিত বেকারের তুলনায় ১জন কর্মঠ রিক্সা চালকের অবদান বেশী। বাবা কিংবা স্বামীর পরিশ্রমের টাকায় অনর্থক শপিং করে বেরানো ১ জন শিক্ষিতা নারীর তুলনায় ১জন গার্মেন্টস কর্মীর অবদান বেশী।

বাকপটু, অসৎ, দুর্নীতিবাজ একজন মন্ত্রীর তুলনায় সেই উদ্দীপ্ত যুবকের ভুমিকা বেশী যিনি ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে চাকরী না করে নিজেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।তাই শ্রমকে ভালবেসে, শ্রমিকে সম্মান করার মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তথা শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব।

মহান মে দিবসে স্বশ্রদ্ধ সালাম সকল শ্রমজীবি মানুষের প্রতি…

নাজমা সাঈদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নগর নিউজ

সর্বশেষ