শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত : ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: সোমবার, মার্চ ৬, ২০২৩

আয়াছুল আলম সিফাত, কক্সবাজার :

গত ৫ মার্চ রোববার দুপুরের খাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রোহিঙ্গারা। হঠাৎ করেই চারদিকে আগুন আর আগুন। দিগবিদিক ছোটাছুটি।

উখিয়া বালুখালীতে তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনা ঘটে। আগুনে দুই হাজার ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। বিকাল ৩টার দিকে প্রথমে ১১ নম্বর ক্যাম্পের বি ও ই ব্লকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে পার্শ্ববর্তী ১০ ও ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

আশ্রিত জীবনের ছোট্টো ঝুপড়িতে যা ছিলো তাও পুড়ে গেছে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই।

উখিয়ার বালুখালী ১১, ১০ ও ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প। যেখানে রোববারের অগ্নিকাণ্ডে আশ্রয় শিবিরের গৃহহারা হয়েছে ১২ হাজার রোহিঙ্গা।

৬ মার্চ সোমবার সকাল থেকে ভস্মীভূত ঘর গুলোতে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। যেখানে অপলক দৃষ্টিতে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়।

এদিকে বালুখালী ক্যাম্পে আগুন দিলো কারা এমন প্রশ্নে নিজেদের নিরাপত্তার কারনে অনেকেই কথা বলতে না চাইলেও, অনেক রোহিঙ্গা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরিকল্পিত ভাবে আগুন দেয় ক্যাম্পে। এই সময় আমরা আগুন নিভাতে চাই গুলির ফায়ার দিয়ে হুমকি দিয়েছে। পরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী চলে যায়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এতদিন ক্যাম্পগুলোতে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সম্প্রতি ক্যাম্পে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পুরনো সশস্ত্র সংগঠন আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) এর সদস্যরা। ফলে ক্যাম্পে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপরে মধ্য দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।

উখিয়া বালুখালী ১১ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ সরওয়ার কামাল জানান, আগুন দেয়ার অভিযোগ এনে এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানান, কমিটিতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, এপিবিএন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা রয়েছেন। সোমবার (৬ মার্চ) সকাল থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজার ঘর ভস্মীভূত হয়েছে। এতে ১২ হাজার রোহিঙ্গা তাদের ঘর হারিয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে তাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করবে। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা (ডাব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।

তিনি আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হচ্ছে। তবে নিখোঁজ কিংবা হতাহতের কোনো ঘটনা নেই।

৬ মার্চ সোমবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এর এই প্রতিনিধি। আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ঘর তৈরি করার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৮টি, ২০১৯ সালে ১০, ২০২১ সালে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ৬৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদিও সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে ২২২টি ছিল। ২০২০ সালে ঘটেছিল ৮২টি। যদিও রোহিঙ্গাদের হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি। এছাড়া চলতি বছর গত তিন মাসে ছোট-বড় ১৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ