শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩
প্রকাশিত: রবিবার, মার্চ ৫, ২০২৩
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ড ঘটনায় : তদন্ত কমিটি গঠিতরোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ড ঘটনায় : তদন্ত কমিটি গঠিতরোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ড ঘটনায় : তদন্ত কমিটি গঠিত
আয়াছুল আলম সিফাত, কক্সবাজার :
রবিবার দুপুরে আগুনে পুড়ে যায় উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তিনটি ব্লক। একসময় আগুন ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের ঘরবাড়ীতে। কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের যান চলাচল।
অগ্নিকান্ডে ক্যাম্পের প্রায় দুই হাজার বসতঘর পুড়ে যায়। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে ১২ হাজার রোহিঙ্গা।
রবিবার দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটের দিকে ১০ ও ১১নং ক্যাম্পের মাঝামাঝি জায়গায় আগুনের সুত্রপাত হয়। এসময় ১১ নং ক্যাম্পের তিনটি ব্লক পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
প্রায় তিন ঘন্টা ও বেশি সময় পর সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের ১০ টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
কক্সবাজার ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো: মিজানুর রহমান জানান,এনজিও গুলোকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে।আগুনে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা পরিবার গুলোকে কুতুপালং এর ট্রানজিট সেন্টার ও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে এবং WFP তাদের খাদ্য সরবরাহ করছে সোমবার থেকে তাদের বাসস্থানের জন্য আসবাবপত্র বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন ১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করা হয়েছে। এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট সিআইসি অফিসও।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ এমদাদুল হক বলেন, বিকেল তিনটার দিকে বালুখালী ক্যাম্পের ডি-১৫ ব্লকের একটি বাড়ির চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেলেও সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পাহাড়ের ঢালুতে ঘরবাড়ি ও পাহাড়ি চিপা গলি হওয়ায় কাজ করতে বেগ পেতে হয়।
স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতাদের ধারণা, অগ্নিকাণ্ডটি পরিকল্পিত হতে পারে। কয়েক দিন ধরে রোহিঙ্গাদের মাঝে গুঞ্জন ছিল নাশকতার আগুন ধরানো হতে পারে। এর আগেও একাধিকবার নাশকতার আগুনে পুড়েছিল বালুখালীর একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প। বেশ কয়েকদিন ধরে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসও’র মাঝে গোলাগুলি-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা হতাহত হয়েছেন। এর জেরে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে উচ্ছেদ করতে শিবিরে আগুন দিতে পারে।
ঘটনাস্থলে থাকা কক্সবাজারের এডিএম মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ১৫ হাজারের মতো মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। পুড়ে গেছে প্রায় দুই হাজারের মতো ঘর। অগ্নিকাণ্ডটি পরিকল্পিত নাশকতা কী না তা খতিয়ে দেখছি আমরা।
শরণার্থী কমিশনার কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২১ সালের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালী এলাকার তিনটি (ক্যাম্প-৮, ৯ ও ১১) ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। ওই অগ্নিকাণ্ডে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়। গৃহহীন হয়েছিল ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যায় ছয় শিশুসহ ১৫ রোহিঙ্গা। ওই আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে তা এখনো জানা যায়নি।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন আট লাখ রোহিঙ্গা।