বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩
প্রকাশিত: শুক্রবার, এপ্রিল ২৩, ২০২১
২০১৩ সালের ঠিক এই দিন (২৪ এপ্রিল) পোশাক শিল্পের ইতিহাসে ঘটে যায় সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা। সেদিন সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ে ১ হাজার ১৩৬ জন নিহত হয় এবং আহত হয় ২ হাজার ৬শ’র বেশি পোশাক শ্রমিক।
অথচ চাইলেই সেদিনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো। দুর্ঘটনার আগেরদিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয় নিচ তলায় থাকা দোকান ও ব্যাংক। কিন্তু উপরের তলায় থাকা ৫টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বাধ্য করা হয় কাজ করতে। ২৪ এপ্রিল সকালে ভবনে বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দেয়। উপরের তলায় থাকা জেনারেটর চালু দেয়ার পরপরই ভবনটি ধ্সে পড়ে।
ঘটনার পর অনেক নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা পাননি প্রয়োজনীয় সহায়তা ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ। যার ফলে অনেক আহত শ্রমিক অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিয়ে আজও ফিরতে পারেনি স্বাভাবিক জীবনে।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ভবনের মালিক রানা, তার পরিবার, সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়রসহ বিভিন্ন জনের নামে পাঁচটি মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে একটি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক একটি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিনটি মামলা দায়ের করে।
সম্পদের হিসাব দাখিল না করা সংক্রান্ত নন সাবমিশন মামলায় রানার তিন বছর কারাদণ্ড হয়েছে ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট। এ মামলায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এদিকে অজ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার মা মর্জিনা বেগমের ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তার ছয় কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন আদালত।
২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে অভিযোগপত্রে রানার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়।
প্রতি বছরে এই দিনটি এলেই শ্রমিক পরিবারের আহাজারিতে গুমরে গুমরে কাঁদতে থাকে মানবতা। নির্মম পঙ্গুত্ব বরণ করা শ্রমিকরা সুবিচার পাওয়ার আশায় থাকলেও অভিযুক্তদের বিচারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন কেবল ভবনের মালিক সোহেল রানা। বাকি আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন ৩২ জন, পলাতক ছয়জন এবং মারা গেছেন দুইজন।
সরকারি হিসেবে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৬ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে সে সংখ্যা আরও বেশি। ভবন ধ্বসের পর সেখানে টানা ১৭ দিন উদ্ধারকাজে যুক্ত ছিলেন নওশাদ হাসান হিমু নামে এক সেচ্ছাসেবক। নওশাদ জানান, তিনি সেখান থেকে অন্তত ১ হাজার মানুষকে জীবিত উদ্ধার করেন যাদের অনেককে বের করতে হয় হাত-পা কেটে। সে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ষষ্ঠ বার্ষিকীতে আত্মহত্যা করেন নওশাদ।
নওশাদ রানা প্লাজার ঘটনা ভুলে যেতে পারেননি, আমাদেরও ভুলে যাওয়া উচিত নয়।