শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

রাঙ্গামাটি শহরে সিএনজি ভাড়া ও যাত্রী পরিবহনে নৈরাজ্য!

প্রকাশিত: শুক্রবার, মে ২১, ২০২১

সাইফুল হাসান, রাঙামাটি:

কোভিট-১৯ এর মহামারির কারণে গণপরিবহন স্বল্প পরিমানে স্বাস্থ্য বিধি মেনে এবং ৬০% ভাড়া বৃদ্ধি করে চালানোর কথা থাকলেও সে নিয়মের কোন তোয়াক্কা করছে না রাঙামাটি শহরের অভ্যন্তরিন একমাত্র গণপরিবহন সিএনজি অটোরিক্সা। শহরের অভ্যন্তরিন একমাত্র গণপরিবহন সিএনজি অটোরিক্সা হওয়ায় তাদের নৈরাজ্যের যেনো কোন শেষ নেই।

কোভিট-১৯ এর লকডাউন শুরু থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছিলেন গণপরিবহন চালকরা। এরপর থেকে সরকারি নির্দেশনা এলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমের সভার মধ্যে দিয়ে সিদ্ধান্ত হয় ৬০% ভাড়া নিয়ে গণপরিবহন চলবে। সে অনুসারে করা হয় সিএনজি অটোরিক্স ভাড়া চার্ট। সে চার্ট অনুসারে ভাড়া নিবে এবং সিএনজি অটোরিক্সায় দুই জন করে যাত্রী পরিবহন করবে। কিন্তু সরজমিনে দেখা যায় ভাড়া চার্ট ৬০% হারে নিলেও মানছে না স্বাস্থ্য বিধি। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে দুই জনের অধিক যাত্রী পরিবহন করছে প্রায় সিএনজি অটোরিক্সা। তবে ভাড়া নিচ্ছেন প্রতিটি যাত্রীর থেকে ৬০% হারে চার্ট অনুসারে। এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইয়াকুব মিয়া নামে এক যাত্রী প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি কলেজ গেইড থেকে বনরূপায় এসেছি আমার থেকে সিএনজি ড্রাইভার ভাড়া নিয়েছে ২০ টাকা। সেটা ঠিক আছে কিন্তু সে যাত্রী নেওয়ার কথা দুইজন, তবে দেখা গেছে সে টিসিসি মোড়ের সামনের থেকে আরও দুইজনকে নিয়েছে তাদের থেকেও ভাড়া নিয়েছে ৬০% অনুসারে। তারা যাত্রী নিবে ঠিকই আগের মত কিন্তু ভাড়া দিতে হবে বেশি এটা কেন? হয় ভাড়া আগেরটা নেন এবং যাত্রী আগের মত নেন, না হয় ভাড়া ৬০% হারে নিয়ে যাত্রী নেন নিয়ম অনুসারে। আমাদের উপর কেন একতরফা ভাবে জুলুম করবেন।

আরেক যাত্রী ইরানী চাকমা বলেন, রাঙামাটি শহরের অভ্যন্তরিন একমাত্র পরিবহন সিএনজি অটোরিক্সা হওয়ায় তাদের ইচ্ছে মত আমাদের যাত্রীদের চলতে হয়। তারা যে নিয়ম করবে সেটাই অনুসরন করতে হবে। তারা ভাড়াও বেশি নিবে, আবার যাত্রীও নিবে বেশি। সেটা বলতে গেলে বলে আপনার না পোষাইলে গাড়ি থেকে নেমে যান। এভাবে তো চলে না। প্রশাসনের দরকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে যেনো সিএনজি চালানো হয় সে বিষয়ে নজর দেওয়া।

গিয়াস উদ্দীন বলেন, ভাড়া বাড়তি নিবেন ঠিক আছে স্বাস্থ্য বিধি মেনে যাত্রীও নেন। না হয় স্বাস্থ্য বিধি মানিয়েনে না, যাত্রা আগের মত নেন ভাড়াও আগের মত নেন। এমনিতে করোনার জন্য আয় রোজগারে ভাটা পড়েছে তার উপর এমন অত্যাচার কি সহ্য করা যায়। শহরে সিএনজি একমাত্র গণপরিবহন হওয়ায় তাদের দাপট বেড়ে গেছে, তাদের উপর এমনিতেও সাধারণ জনগণ ক্ষিপ্ত অনেক আগের থেকে। মনে হচ্ছে তাদের কাছে আমরা যেনো জিম্মি হয়ে আছি।

এপ্রসঙ্গে রাঙামাটি সিএনজি অটোরিক্স শ্রমিক ইউনিয়ন’র সভাপতি পরেশ মজুমদার জানান, আমরা প্রশাসনের সাথে বসে ৬০% বৃদ্ধি হারে একটি ভাড়ার চার্ট তৈরি করেছি। যেখানে সর্বনিম্ম ১৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৯ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এ চার্ট আমরা বিতরণও করেছি এবং সে অনুসারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে দুইজন যাত্রী পরিবহনের জন্য বলেছি, তবে যদি একই পরিবারের হয় সেক্ষেত্রে তিনজন নিতে পারবে।

অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে এই শ্রমিক নেতা জানান, যেটা অভিযোগ করা হচ্ছে ভাড়া চার্ট অনুসারে নিয়ে যাত্রী বেশি নেওয়া হচ্ছে, সে কাজটা করছে বাহিরের কিছু সিএনজি ড্রাইভাররা। তবে হ্যা অস্বীকার করা যাবে না আমাদেরও কিছু কিছু সিএনজি ড্রাইভার ভাড়া ৬০% হারে নিয়ে যাত্রীও নিয়মের বাহিরে বাড়তি নিচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত তাদেরকে সচেতন করে আসছি। তারপরও যদি এমন করে কেউ নিয়মের বাহিরে যাত্রী পরিবহন করে সে জন্য প্রশাসন যদি কোন পদক্ষেপ নেয়, আমরা এতে কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করবো না।

ভোক্তা ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন বলেন, বৃদ্ধি ভাড়া নিচ্ছে আবার যাত্রীও আগের মত নিচ্ছে, এমনটা তো কথা ছিলো না। এটাতো ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিচ্ছে যেনো স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিচ্ছিত হয় মত। কিন্তু আমি বাড়তি ভাড়াও দিবো আবার নিরাপত্তাও পাবো না। এটাতো এক ধরণের জুলুম করা হচ্ছে। চার্ট অনুসারে ভাড়া বৃদ্ধি করে উপকার হয়েছে ড্রাইভারদের, জনগণের কোন উপকার হয়নি, উল্টা ক্ষতি হয়েছে। বলা যায় জনগণের উপর একপ্রকার জুলুম হচ্ছে। হয় আপনারা ভাড়া আগের মত নিয়ে যাত্রীও আগের নিয়ম অনুসারে নেন, না হয় বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীও নিয়ম অনুসারে নেন, এতে করে আমাদেরও নিরাপত্তা নিচ্ছিত হলো।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান বলেন, আগে ভাড়া নিয়ে সমস্যা ছিলো, সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে যদি একই পরিবারের হয় তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু যদি ভাড়া বৃদ্ধির চার্ট অনুসারে নিয়ে যাত্রীও নিয়মের বাহিরে গিয়ে বেশি নেয় সেটা অন্যায়। আমরা তো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। কিন্তু সব সময়তো রাস্তায় থাকতে পারি না, সে সুযোগ নিয়ে যদি তারা এমনটা করে তবে সেটার উপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল কোর্ট আরও জোরদার করা হবে।

সর্বশেষ