বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩

রাঙামাটিতে জন্ম নিবন্ধন করতে সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: রবিবার, মে ২৩, ২০২১

সাইফুল হাসান, রাঙামাটি:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটেল জন্ম নিবন্ধন সনদ চাওয়ার পর থেকেই লোকে লোকারণ্য রাঙামাটি পৌরসভা। কারো প্রয়োজন ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ আবার কারো প্রয়োজন সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন সনদ। এই সনদ নিতে কোন প্রকার রশিদ ছাড়া সরকারি ফি’র বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠার পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের দাবী কোন সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না তারা। সনদ গ্রহীতাদের স্বাস্থ্য বিধি মানতে বা মানাতে দেখা যায়নি কাউকে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের থেকে চাওয়া হয়েছে ডিজিটেল জন্ম নিবন্ধন সনদ। কোন কোন প্রতিষ্ঠান সে জন্ম সনদটি ২৭ মে’র মধ্যে সরবরাহ করতে বলছেন। যার কারণে গত দুই একদিন ধরেই রাঙামাটি পৌরসভার কার্যালয়ের নিজ তলায় যে কক্ষ থেকে এই সনদ প্রদান করা হয় সে কক্ষের সামনে শিক্ষার্থী অভিবাবকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে গত দুই একদিন ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। কক্ষে দরজা বন্ধ করে জানালা দিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা এবং হাতে লেখা জন্ম সনদ। আর সে টাকা আর হাতে লেখা জন্মসনদ জমা দিতে হুমরি খেয়ে পরছেন অভিবাবকরা। এতে করোনা সংক্রামণ রোধে যেমন স্বাস্থ্য বিধি মানার বালাই নেই, তেমনি ভাবে পৌরকর্তৃপক্ষের কাউকে সে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর চেষ্টা করতেও দেখা যায়নি।

প্রতিবেদক টানা দুই ঘন্টা পৌর চত্ত্বরে অবস্থান করে দেখলেন, হাতে লেখা জন্মনিবন্ধনে ঠিক আছে কিন্তু অনলাইনে ভুল এমন অনেক অভিবাবককে ঘুরতে দেখা গেছে পৌরচত্তরে। তেমনি ভাবে ভুল সংশোধনে কি করনীয় তাও বলার কাউকে দেখা গেল না, জানালার ফাঁকে শুধুই বলা হচ্ছে অনলাইনে ভুল আছে সংশোধন করে নিয়ে আসুন। কেমনে কোন পদ্ধতিতে এগোতে হবে সেবিষয়েও বলছেন না কেউ। তবে ভিন্ন প্রদ্ধতিও আছে পরিচিত জন হলে বলে দিচ্ছেন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে সংশোধন আবেদন করে ইউএনও অফিসে গিয়ে সংশোধন করে তাদের প্রেরিত ফর্ম বা কাগজটি দিলে আমরা সনদ দিয়ে দিব।

আর এই ডিজিটেল জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার জন্য কাগজ জমা নেওয়ার সময়ই নেয়া হচ্ছে ১শত টাকা করে আবার সংশোধনের জন্য নেয়া হচ্ছে কারো কাছে ২শত কারো বা কাছে ১শত টাকা। টাকা নেওয়া কাউকে কোন রশিদ সরবরাহ করতে দেখা যায়নি পৌরকর্তৃপক্ষকে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদনের জন্য ফি ১শত টাকা। জন্ম তারিখ ব্যতীত নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদির তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ৫০টাকা। রশিদ ছাড়া কাউকে কোন টাকা প্রদান না করার জন্য বলা হয়েছে এতে।

সনদ নিতে আসা ব্যক্তিদের বিড়ম্বনার বিষয়টির একটি ভিডিও জঅঘএঅগঅঞও ঐওখখ ঞজঅঈঞ নামে একটি গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে, সেখানে ভুক্তভুগিরা ও তাদের আশপাশের লোকজন নানা বিড়ম্বনার তথ্য কমেন্ট অবশনে তুলে ধরেন।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, বিদ্যালয় গুলোতে কখন পর্যন্ত ডিজিটেল জন্ম নিবন্ধন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ তা এখনো উদ্ধত্তন কর্তৃপক্ষ জানাইনি। কিন্তু কেন বিদ্যালয়গুলো এত তরিগরি করে জন্ম নিবন্ধন জমা নিচ্ছেন তা তারা জানেন না। তবে বিদ্যালয় গুলোতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে ধীরে সুস্থে জন্ম নিবন্ধন জমা নেওয়ার জন্য মেসেস পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, সরকারি ফি এর অতিরিক্ত কোন টাকা আদায় করার সুযোগ নেই, তবে সংশোধনের জন্য একশত টাকা আদায়ের অভিযোগটা আমরা পেয়েছি। পৌরকর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কথা হয়েছে স্বল্পকালিন সময়ের জন্য একটি টিম সেখানে কাজ করবে, যাতে করে জনদূর্ভোগ কমাতে সংশোধনের আবেদনের কাজটি সেখানে করে দিতে পারে। এতে তারা সরকারি ফি ছাড়াও খুব অল্প টাকা চার্জ নিতে পারবে, আবেদনের কাজটি সম্পূর্ণ করা চার্জ হিসেবে, তবে সেটিও পৌরকর্তৃপক্ষ নিধারণ করে দিবে এবং নোর্টিশ টাঙ্গানোর কথা রয়েছে। এতে উপজেলা পরিষদের কোন চার্জ নাই, উপজেলা পরিষদের নামে কেউ কারো কাছে কোন চার্জ দিবেন না।

পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বেশি ফি আদায়ের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখা হবে, নোর্টিশেরও ব্যবস্থা করা হবে। স্বাস্থ্য বিধি মানানোর ব্যবস্থাও নেয়া হবে হবে।

ছেলের জন্য জন্ম নিবন্ধন নিতে আসা করিম নামে এক ব্যক্তি জনান, দুই শত টাকা নিয়ে হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধনটি জমা নিয়েছে, কিছুক্ষণ পর ফেরত দিয়েছে এতে ভুল আছে সংশোধন করতে হবে বলে। কিন্তু কোথায় কি ভাবে তা করবো তা বুঝতে পারছি না।

মারুফ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ডিজিটেল জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে এসেছি এটার জন্য একশত টাকা নিয়েছে।

রাঙামাটি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি উদ্ধত্তন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি, তারা ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণে এখনো কোন সময়সীমা বেধে দেয়নি, ধীরে সুস্থে নেয়া যাবে তারাহুরার কিছু নেই।বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরও জানিয়েছি।

রাঙামাটি পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান জানান, অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি আমি ক্ষতিয়ে দেখবো। আর আগামীকাল থেকে কোন বিষয়ে কত ফি তা নোটিশ আকারে টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা উপমা জানান, সরকারি ফি অনুসারেই ফি আদায় করতে হবে, তার বাইরে আদায় করা যাবে না। সে বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। তবে উপজেলা পরিষদের কোন চার্জ নেই, উপজেলা পরিষদের নামে যাতে কেউ কোন চার্জ না নেই সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি।

কেন অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে সে বিষয়ে রাঙামাটি পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন প্রস্তুত কারক বশির আহমেদের মুঠোফোনে অসংখ্যা বার ফোন করে ও তার কোন সারা পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ

সর্বশেষ