মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

মুক্তিযোদ্ধা মেয়রের হাতে জামায়াতপন্থী প্রকৌশলীর পদোন্নতি?

প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, মে ২৭, ২০২১

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :

রেজাউল বারী। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র শিবিরের ভিপি ছিলেন। পরবর্তীতে বিএনপির মেয়র মঞ্জুর আলমের আমলে দাপুটে অবস্থানে ছিলেন তিনি। এমনকি ২০১১ সালের মার্চে অস্থায়ী ভিত্তিতে কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ৭ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র। তাদের মধ্যে পাঁচজনই ছিলেন ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের পদধারী নেতা। বিএনপির মেয়র ও সাবেক শিবির নেতা বারীর সক্রিয় হস্তক্ষেপে তার ভাইসহ এই পাঁচজনের নিয়োগ হয় বলে জানা গেছে। আর এ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির অন্যতম দূসর এ প্রকৌশলীর পদোন্নতি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সৈনিক চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর হাত ধরে।

জানা যায়, বিগত মেয়রের আমলেও নানা বিতর্কিত কারণে পদোন্নতি হয়নি এ প্রকৌশলীর। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে হয়েছেন দুইবার পদাবনতি। কিন্তু আদালতকে ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে সহকারী প্রকৌশলীর পদোন্নতি নিয়েছেন তিনি। এবার সে মিথ্যার উপর ভর করে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিকের পদোন্নতি কমিটি। আর এ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ সিদ্ধান্তের রেজুলেশন ও অফিস আদেশ জারি করার কথা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরিতে যোগদান করেন জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া প্রকৌশলী রেজাউল বারী ভুইয়া। সেই থেকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কাজ করতে থাকেন তিনি। পরে ২০০১ সালে প্রথম তাকে উপ-সহকারী থেকে সবেতনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই দায়িত্ব পালন করার সময় সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে ২০০৭ সালে তাকে সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব থেকে ফের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। ২০১০ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত উপ-সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পটপরিবর্তনের পর মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে বিএনপির টিকেটে এম মঞ্জুর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে তাকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে ২০১০ সালের ২২ জুলাই ফের চলতি দায়িত্ব দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে গার্বেজ ট্রিটমেন্ট্র প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। তিনি ২০০৭ সাল থেকে তিনি ২০১০ সাল পর্যন্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পালন করেন।

কিন্তু ২০১১ সালে প্রকৌশলী রেজাউল বারী ভুইয়া উচ্চ আদালতে পদোন্নতির জন্য একটি রিট মামলা দায়ের করেন। জানা গেছে, সেই রিটে তিনি ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটানা সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন মর্মে আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন। ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দুই বছর তিনি যে সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে ছিলেন না— সেই তথ্য গোপন করেন। আদালতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে তাকে সহকারী প্রকৌশলী পদে স্থায়ী করতে নির্দেশনা নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এরপর তাকে আদালতের নির্দেশে সহকারী প্রকৌশলী পদে স্থায়ী পদোন্নতি দেয় চসিক। ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল এক অফিস আদেশে তাকে স্থায়ীভাবে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তবে পদোন্নতির নেপথ্যে জালিয়াতির বিষয়টি পর্দার আড়ালেই থেকে গেছে এতোদিন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের এ প্রকৌশলী রেজাউল বারী মিটিংয়ে আছে বলে জানান। পদোন্নতির বিষয়ে কথা বলতে চাই জানালে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।


তবে চসিকের আইন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, যে ডিপার্টমেন্ট পদোন্নতি দিবে সেটা যাচাই বাছাই করে দিবে। খোঁজ খবর নিয়ে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোজাম্মেল হক জানান, আমি মিটিংয়ে আছি।

সর্বশেষ