শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রকাশিত: বুধবার, জানুয়ারী ১১, ২০২৩
মিথিলা ফারজানা হক
মন খারাপ বা দুঃখ হল একটি মৌলিক আবেগ এবং যা আমাদের মানুষ করে তোলে তারই একটি অংশ এবং আমরা সবাই জানি এটি কেমন লাগে। খারাপ কিছু ঘটলে আমরা সবাই দুঃখ বোধ করি আমাদের মন খারাপ হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, প্রিয়জন হারানো, ব্রেকআপ বা হতে পারে একটি খারাপ দিন এ সবই দুঃখের কারণ হতে পারে।
আপনি যদি কোন বিষয়ে দুঃখ বোধ করেন বা মন খারাপ হয়ে থাকে তখন আপনি কিছু সময়ের জন্য নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান এবং আপনার মেজাজের পরিবর্তন ঘটে। তবে সেটির স্থায়িত্ব সর্বাধিক কয়েক দিনের জন্য। সময়ের সাথে সাথে এটি নিজেই কিছুটা ভাল হয়ে যায়।
অন্যদিকে ডিপ্রেশন একটি মানসিক রোগ। এটি কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য বিভিন্ন উপসর্গে নিজেকে দেখায়। যে জিনিসগুলি আগে আপনাকে আনন্দ দিয়েছিল বা আপনাকে উত্সাহিত করেছিল সেগুলি আর আপনাকে আনন্দিত করে না। আপনি ক্রমাগত ক্লান্ত বোধ করেন এবং অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলেন।
মন খারাপ সাধারণত কোন কিছুর প্রতিক্রিয়া, উদাহরণস্বরূপ একটি বেদনাদায়ক ঘটনা। এটি স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর, তবুও প্রায়ই অপ্রীতিকর, আবেগ। অন্যদিকে, কোনো আপাত কারণ ছাড়া ই প্রায় ডিপ্রেশন দেখা দেয়। ডিপ্রেশনে, আপনার উপসর্গগুলি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা ব্যক্তির কথা চিন্তা করার সময় ঘটে না। বরং প্রায় প্রতিটি পরিস্থিতিতে উপস্থিত থাকে ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডিপ্রেশন একটি সাধারণ মানসিক ব্যাধি। বিশ্বব্যাপী, এটি অনুমান করা হয় যে ৫% প্রাপ্তবয়স্ক ডিপ্রেশনে ভোগেন। আরও বলা হয়ে থাকে যে, মন খারাপের মত আবেগ যখন দির্ঘদিন যাবৎ থাকে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের ও বেশি সময় ধরে থাকে সেই সাথে কাজে কর্মে আগ্রহ না থাকা, ঘুমে সমস্যা, খাওয়া দাওয়াতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা সহ ইত্যাদি সমস্যা যদি তার সাথে যুক্ত হয় তাহলে ধরে নিতে হবে সে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত। ডিপ্রেশন একটি রোগ যেটিতে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন । ডিপ্রেশন ব্যক্তিকে আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যায় ।
ডিপ্রেশনের কারন : বিষণ্ণতার কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে। এটি বিভিন্ন ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে এবং অনেকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণ তাদের হতাশার কারণ হতে পারে। আবার অনেকে দেখতে পায় যে তারা কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। ডিপ্রেশনের সম্ভাব্য কারণ গুলির মধ্যে রয়েছে জেনেটিক কারন। স্নেহবঞ্চিত ও অবহেলা: যে সব শিশু মা-বাবার স্নেহবঞ্চিত, পারিবারিক কোন্দলের মধ্যে বেড়ে ওঠে তাদের মধ্যে ডিপ্রেশনের মাত্রা বেশি থাকে। শৈশব ট্রমা সহ ইত্যাদি কারণ চিহ্নিত করা হয়।
ডিপ্রেশনের লক্ষণ- সুনির্দিষট কোন উপসর্গ নয় বরং অনেকগুলো শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক উপসর্গ রয়েছে। শারীরিক লক্ষণ যেমন খিদে কমে যাওয়া বা কখনো অতিরিক্ত খাওয়া। ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা ও মাথাসহ শরীরে জ্বালাপোড়া। যৌনস্পৃহা কমে যাওয়া। কোষ্ঠকাঠিন্য (খাওয়া ও হজমের সমস্যা থেকে হয়ে থাকে), অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ এবং নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সমস্যা। পাশাপাশি আনন্দের বিষয় ও ঘটনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলা (আগে যেইসব বিষয় আপনাকে আনন্দ দিত সেইসব বিষয়ে আনন্দ না পাওয়া, আগ্রহ হারিয়ে ফেলা) কোন কারণ ছাড়া কান্নাকাটি করা , কনফিডেনস কমে যাওয়া সহ ইত্যাদি শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়।
এছাড়াও ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা যায় যেমন পারিবারিক , সামাজিক সম্পর্ক গুলি মেন্টেইন করতে অসুবিধা , দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হওয়া সহ ইত্যাদি সামাজিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিষন্নতাকে কেবল একজনের ব্যক্তিগত রোগ হিসেবে ভাবার কারণ নেই, জনস্বাস্থ্যে বিষণ্নতার প্রভাব ব্যাপক।
ডিপ্রেশন এবং দুঃখের সম্পর্ক আছে কিন্তু একই নয়। দুঃখ এমন একটি আবেগ যা প্রত্যেকে অনুভব করে। অন্যদিকে, বিষণ্ণতা একটি অপ্রতিরোধ্য এবং চলমান মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।