বুধবার, ৩১ মে ২০২৩
প্রকাশিত: শনিবার, মে ২২, ২০২১
(রোজিনা ইসলামকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা আমাকে ছাড়ছেই না। তাই উদ্বেগ কমাতে আইন বিষয়ে অজ্ঞ হয়েও আইন আর আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবনা চলছে মনে। যা ভাবছি তারই কিছু লিখছি।)
রোজিনা ইসলাম অপরাধ করেছেন, না অপরাধ করেননি- সেই বিচার এখন আদালতের প্রধান বিবেচ্য নয়। প্রধান বিবেচ্য হচ্ছে, তাকে জামিন দেওয়া যায় কি না?
প্রথম ভাবনা: যে ধারায় মামলা হয়েছে তাতে জামিনের বিধান রয়েছে কি না?
সরল উত্তর হচ্ছে, দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনের ৩ ধারায় মামলা হলে জামিন না দেওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
যদি মামলাটা যেভাবে দায়ের হয়েছে সেটিকে আদালত সেভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে করেন তাহলে জামিন নাও দিতে পারেন। আমার পাঠ বলে, সেই সুযোগ যথেষ্ট রয়েছে।
অনুমান করি, এ কারণেই চট জলদি আদেশ না দিয়ে আদালতকে সময় নিতে হচ্ছে।
এতে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, রোজিনা ইসলামকে যদি নিম্ন আদালতে জামিন দেওয়াও হয় তার পরেও জামিনের আদেশ স্থগিত করার আবেদন নিয়ে সরকার পক্ষ উচ্চতর আদালতে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে, কারাগারে আদেশ পৌঁছানোর আগেই নিম্ন আদালতের আদেশ উচ্চতর আদালত স্থগিত করে দিলেন আর রোজিনা ইসলাম কারাগারেই থেকে গেলেন।
উল্টোটাও হতে পারে, নিম্ন আদালত রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন মঞ্জুর করলেন না এবং রোজিনা ইসলামের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন জমা হলো।
যে হেতু আমরা দেখছি যে, নিম্ন আদালত সময় নিয়ে আদেশ দিয়েছেন, সুতরাং একই কারণে উচ্চ আদালতেও তুলনামূলক বেশি সময় লেগে যেতে পারে। এরপরেও দেখা যেতে পারে যে, হাইকোর্টে গিয়েও দুই বিচারকের বেঞ্চ বিভক্ত রায় দিচ্ছেন, একজন জামিনের পক্ষে, অন্য জন্য বিপক্ষে। এরপর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আবার তারিখ পরবে।
ও ভুলেই গেছিলাম, এখন তো মহামারী চলছে! আদালতে রিট-বেঞ্চ ছাড়া দ্বৈত-বেঞ্চ বসছে কি? শুনেছিলাম, একক বেঞ্চ রুল দিতে পারে না, রিট-বেঞ্চ না কি অন্তর্বত্তী আদেশ দিচ্ছেন! অনেক দিন আগে শুনেছিলাম। এখন কি অবস্থা জানি না! আবার কিছু দিন আগে দেখলাম, আগাম জামিন হচ্ছে না। আসলে পরিস্থিতিটা এমন যে সংবিধানের ১০২ ধারার ফয়সালা কী হচ্ছে, ভার্চুয়াল আর অ্যাকচুয়াল কোর্ট কিভাবে কাজ করছেন, সংবিধানের ১০৭ ধারার কী অবস্থা- এ সব আমার মতো আম-পাবলিকের জানার কথা না, আর প্রতিদিনের পরিস্থিতি জানার উপায়ও আমার নাই। তবে সম্প্রতি শুক্রবারেও তো সি এম এম আদালত জামিন দিয়েছে, শুনেছি। ও হো! আর পারছি না। এসব ভাবতে গিয়ে মাথা আরও গুলিয়ে যাচ্ছে, আরও উদ্বিগ্ন বোধ করছি।
এইটুকু বুঝতেছি, বাদির যদি বদ-ইচ্ছা (ব্যাড-ইন্টেনশান) থেকে থাকে তাহলে অনেক অনেকটা সময় রোজিনা ইসলামকে জেলে থাকতেও হতে পারে। যারা মামলাটা করেছে, তাদের জন্য এটুকুই বা কম পাওনা কিসের? এই মামলাতে তাদের পয়সাও ব্যয় হচ্ছে না, টেনশানও নিতে হচ্ছে না। মামলায় তাদের পক্ষের উকিলকে যে টাকা দিতে হবে, যে খরচপাতি হবে সবই তো জনগণ বহন করবে। সুতরাং তাদের তো ‘নো চিন্তা ডু ফূর্তি’ অবস্থা।
দ্বিতীয় ভাবনা:
একটি আইনে জামিন প্রসঙ্গে যাই বলা হোক না কেন, তারপরও আদালত আরও কিছু বিবেচনায় জামিন দেন বা দিতে পারেন। এক্ষেত্রে কি সম্ভব?
সরল উত্তর হচ্ছে, সম্ভব।
আমার জানা মতে, আদালত সাধারাণত যে দিকগুলো বিবেচনায় রেখে জামিন দেন তা হলো,
১. আসামী কি দেশ থেকে পালায় যেতে পারেন?
২. আসামী কি মামলার প্রমাণ নষ্ট করতে পারেন?
৩. আসামী কি মামলার বাদি/সাক্ষীকে প্রভাবিত করতে পারেন?
৪. আসামী কি মমলার তদন্ত কাজে বাধা দিতে পারেন?
বিচারে শাস্তি হওয়ার আগেই আসামীকে কারাগারে রাখা যে এ দেশে একধরনের শাস্তিই- তা তো সাধারাণ বোধ-বুদ্ধিই বলে দেয়। তাই আসামীকে জামিন দিয়ে দেওয়াই হচ্ছে স্বাভাবিক ব্যাপার। আর মহামারীকালে কারাগারে রাখার চেয়ে জামিন দিয়ে দেওয়া সব ক্ষেত্রেই উত্তম। উত্তম কাজটি করতে আদালত পিছ পা হওয়ার কথা না।
কিন্তু এই দেশে এতো বড় বড় সব উলটাপালটা ঘটনা ঘটেছে, এতো বড় মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত সত্যর মতো হয়ে গেছে যে আর কোনো ঘটনাকেই অস্বাভাবিক অসঙ্গত অবিচার বা অন্যায় মনে হয় না। কিন্তু তারপরও আশা করি, আগামীকাল ভাল কিছুই হবে। অসহায়দের পক্ষে আশা নিয়ে বাঁচা ছাড়া আর কি বা আছে!
লেখক: আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়