বুধবার, ৩১ মে ২০২৩
প্রকাশিত: সোমবার, এপ্রিল ৩, ২০২৩
নাজমা সাইদ
একটি প্রবাদ আছে “Higher the post higher the responsibilities.” আমাদের উচিৎ দায়িত্ব পালনে সচেতন হওয়া ও জবাবদিহিতা নিশ্চত করা। আপনি যত বড় পদ বা দায়িত্বে থাকবেন আপনার হৃদয় তত বড় হওয়া প্রয়োজন। সঙ্কীর্ণ মানুষিকতা ও প্রতিহিংসা পরিত্যাগ করতে না পারাটা বড় পদে দায়িত্ব পালনের অযোগ্যতার প্রমান। সহ-যোদ্ধা, সহ-কর্মীদের স্নেহ, শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও মূল্যায়ন করতে না পারেন তবে তাদের কাছ থেকে শ্রদ্ধা, সম্মান, সহানুভূতি প্রত্যাশা করা যায় না। কারো আচরনে কষ্ট পেয়েছেন? ভুলে যান, সময়ের হাতে ছেড়ে দিন, সে উপযুক্ত সময়ে তার প্রাপ্য পেয়ে যাবে, প্রতিহিংসা পরায়ন না হয়ে বরং ছাড় দিন, ছেড়ে দিন, হয় সে তার ভুল বুঝতে পারবে অথবা সময়ের পরিক্রমায় সে তার উপযুক্ত শিক্ষা পেয়ে যাবে। মনে রাখা ভালো যে “প্রতিহিংসার গর্ভে প্রতিহিংসার জন্ম”। সহনশীলতার প্রতিদান সহনশীলতা। মায়ার বদলে মায়া। ভালবাসার বদলে ভালবাসা।।
মানুষের যোগ্যতার প্রকাশ পায় প্রতিকুল পরিস্থিতিতে সঠিক ব্যবস্থাপনায়, কৌশল ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পাড়ার দক্ষতার উপর। বঞ্চনা বা অবমূল্যায়ন পরিস্থিতিতে কখনো ক্ষুব্ধ হওয়া উচিৎ নয়, এ সময় মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতির মোকাবেলা করে পদক্ষেপ গ্রহন করতে হয়। বঞ্চিত মানুষ মাত্রই রাগান্বিত। মানুষ তার জীবনের অধিকাংশ ভুলই করে থাকে রাগের সময়, আর মজার বিষয় হলো রাগের সময় একটি মানুষ তার খোলস ছেড়ে বের হয়, অসংলগ্ন আচরন ও কথার মাধ্যে প্রকাশ পায় তার আসল রুপ। তাই ধৈর্যের সাথে রাগকে নিয়ন্ত্রন করে বুদ্ধিমত্তার দ্বারা কাজ করতে হয়। কিছু মানুষ আছে যারা ক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে অধিক ক্ষুব্ধ হতে উসকানী দেয়, এবং উপভোগ করে, কিন্তু এতে ক্ষতি যা হবার তা রাগান্বিত ব্যক্তিরই হয়। রাগের মাথায় এমন আচরন করবেন না যাতে আপনার শত্রু বেড়ে যায়, বরং সংযত আচরন করুন যাতে আপনার বন্ধুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং আপনার লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। মনে রাখবেন রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
কোন উদ্দেশ্য বা স্বর্থ হাসিলের জন্য কারো মিথ্যা প্রশংসা করা এক ধরনের ভণ্ডামি। কারো প্রশংসা করেলে ততটুকুই করুন যতটুকু সে প্রাপ্য। যেটা মন থেকে বিশ্বাস করেন ঠিক সেটাই বলেন অথবা চুপ থাকা শ্রেয়। আজ যার প্রশংসা করলেন সময়ের আবর্তে, স্বার্থ কিংবা সম্পর্কের টানাপোড়নে কাল যদি তার নিন্দা করেন তবে সেটা আপনার ব্যক্তিত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।তাই চিনে, বুঝে,ভেবে সময় নিয়ে তারপর কারো জিন্দাবাদ বা নিন্দাবাদ করুন। কেননা কারো নিন্দা করার পর যদি আবার কখনো সেই তার সমুখে দাড়াতে হয় তবে সেটা খুবই বিব্রতকর।
কারো সমালোচনা করতে হলে তার চরিত্র বা আচরন নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে হয়। উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বা অনুমান নির্ভর হয়ে কারো চরিত্রহনন করা উচিত না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো কারো ধর্ম, বর্ন বা শারিরিক ত্রুটি নিয়ে কটাক্ষ করা হীন মানুষিকতার বহিঃপ্রকাশ। মনে রাখতে হবে যে, কেউ নিজেকে নিজে সৃষ্টি করেনি, নিজেকে নিজে সৃষ্টি করার ক্ষমতা থাকলে সবাই নিজেকে সুন্দর, সেরা ও ত্রুটিহীন করে সৃষ্টি করতো। সৃষ্টির ত্রুটি তো আল্লাহ ইচ্ছায়, যাতে তিনি মানুষকে পরিক্ষা করতে পারেন। সেই ত্রুটি নিয়ে কটাক্ষ বা বিদ্রুপ মন্তব্য করা মানে আল্লাহর সৃষ্টির উপর বিরুপ মন্তব্য করা যা অত্যন্ত কদর্য ও দৃষ্টতাপূর্ন।
শেষকথা, দায়িত্ব পেলে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। অপারগতায় স্বেচ্ছায় অব্যাহতি। অবিচার করলে অবজ্ঞার স্বীকার হতে হয়। অবিবেচনাপ্রসূত আচরন থেকে বিরত থেকে ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে বৃহৎ স্বার্থ সর্বদা অগ্রাধিকার দিতে হয়।
লেখক : শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক