শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রকাশিত: শুক্রবার, মে ৭, ২০২১
আমার সহকর্মী এডাম মাঝে মাঝে আমাকে চমকে দেয়। কখনো বা অসাধারণ পারফর্ম করে আবার কখনো কখনো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েও। গেল বছর সে আমাদের বেস্ট সেল্স লিডার ছিল। অথচ এ বছর শুরু থেকেই সে ধুকছিল। প্রথম কোয়ার্টারে কাঙ্খিত লক্ষ্য মাত্রা তার টিম ছুতে পারেনি। এ নিয়ে সে ছিল খুবই চিন্তিত। তবে হতাশাগ্রস্থ নয়।
এর মাঝে গেল মাসে তার জন্মদিন ছিল। সহকর্মীদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো আমার দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। ক্ষুদে বার্তায় তাদের যে কাজ গুলো আমার পছন্দের সেই কাজ গুলোর কথা লিখতে ভালোবাসি আমি, যা লিখি তা মন থেকে লিখি, বিশ্বাস থেকে লিখি ।
তো এডামের জন্মদিনে তার দারুণ কিছু গুণের কথা লিখে গেল বছরের অসাধারণ পারফরমেন্স এর কথা স্মরণ করে তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি মনে করি সহকর্মীদের প্রতি এই গ্রেটিটিউডটা থাকা খুব জরুরি !
সে টেক্সটটা পড়ে ফোন দেয়। বলে- স্যার, আপনি যে আমার খারাপ সময়ে গেল বছরের অর্জনের কথা ভুলে যাননি এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, আমার টিমের ব্যাকলগ আমি এপ্রিলেই কাভার করে দেব। এবং সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করব যাতে তিনি আমাকে সহযোগিতা করেন।
বিশ্বাস করুন, আল্লাহর রহমতে ও যা বলে তা করে দেখায়। এবারো সে তাই করল এবং করলো এমন কঠিন সময়ে যখন কোভিড এর দ্বিতীয় ঢেউ বেশ জেকে বসেছে চট্টগ্রামে। এপ্রিলে সে একাই ৫ টা ফ্ল্যাট বিক্রি করল ! আলহামদুলিল্লাহ !
আমি তার কথা আর কাজের আশ্চর্য্য মিল দেখে গতকাল মে মাসের টাউন হলে তাকে বললাম, তুমি তো দেখছি “মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ” হয়ে উঠছ ! আর কেউ না বুঝুক সে আমার কথার অর্থ ঠিকই বুঝে গেল এবং জিভে কামড় দিয়ে বলল, না না স্যার, মোটেই না । আমি ওই পর্যায়ে যেতে পারিনি !
বাকীরা হয়ত বুঝতে পারেনি যে আমি কি মিন করেছি। তাই একটু খোলাসা করে বললাম যে “মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ” ঐ ব্যক্তি যার কোনো দোয়া বিফলে যায় না, মহান আল্লাহ সাথে সাথে তা কবুল করেন ।
সবাই তখন আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল যে এ রকম হওয়া কি আদৌ সম্ভব ?
-কঠিন, এই যুগে ভীষণ কঠিন। তবে একেবারে অসম্ভব না । আমি বললাম ।
-সম্ভব করার উপায়টা একটু বলেন বস, আমার এক সহকর্মী দাঁড়িয়ে বলল ।
উপায় সহজ আবার কঠিনও। পাঁচটি শর্ত যদি কেউ পুরণ করতে পারে তবে ইনশাআল্লাহ সে “মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ” হতে পারবে, তার দোয়া বিফলে যাবেনা ।
প্রথম শর্ত: ইনকাম হালাল হতে হবে । কারণ যে এক জাররা পরিমান হারাম খায় তার কোন ইবাদত বন্দেগী কিছুই কবুল হয় না ।
দ্বিতীয় শর্ত : যখন দোয়া করবে তখন কেবল আল্লাহর কাছেই চাইবে । কোনো মাধ্যম ধরে কিংবা মাজারে মাথা ঠুকে নয় ।
তৃতীয় শর্ত: প্রবল বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করতে হবে যে আমার দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করবেন ।
চতুর্থ শর্ত : রাসুল (সা:)এর নামে দুরুদ পাঠ করে তারপর সমস্ত নেক ইচ্ছা পেশ করতে হবে মালিকের দরবারে । কারন রাসুল (সা:) এর উপর দুরুদ পাঠ না করলে সেই দোয়া উর্ধাকাশে পৌঁছায় না ।
পঞ্চম শর্ত : দোয়ার সাথে কাজও লাগবে । অর্থাৎ কেউ যদি তার ভালো পারফরমেন্স এর জন্য দোয়া করে তাহলে তাকে সেটা অর্জনে চেষ্টাও করতে হবে, কেউ যদি অসু্স্থ হয় তাকে সুস্থতার জন্য ওষুধ খেতে হবে ।
সবাই মাথা ঝাকাল। আমি বললাম, এই যে সমাজে নানা অস্থিরতা চলছে এর পেছনে মূল কারন আমরা টাকা উপার্জনকেই জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে ফেলেছি। আমরা যদি জীবনের সঠিক পারপাস ঠিক করতে পারতাম, তবে সেখানে টাকা উপার্জনের আগে টাকা কিভাবে উপার্জন করব বা করছি তা নিয়ে ভাবতাম ।
প্রকৃতপক্ষে হালালের মাঝেই রয়েছে কল্যাণ। আমরা সাফল্য খুঁজি । দুনিয়াতে কল্যাণের জন্য মরিয়া হই অথচ মুয়াজ্জিন প্রতিদিন পাঁচবেলা আমাদের ডেকেই চলছেন-হাইয়া আলাল ফালাহ – কল্যাণের দিকে আসো ! আমরা কী সেই ডাক ঠিকঠাক শুনতে পাই ?
এডাম সেই ডাক শোনাদের একজন যাকে আমি মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করি, এবং বিশ্বাস করি এরকম সৎ, পরিশ্রমী এবং নীতিবান সেল্স লিডার আমাদের আরো বেশি বেশি দরকার যারা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানেই নয় বরং সমাজে কল্যাণের স্রোত বইয়ে দিতে সক্ষম !
লেখক: তানভির শাহরিয়ার রিমন, র্যাংকস এফসি প্রোপার্টিস লিমিটেডে।