বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩
প্রকাশিত: রবিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২১
দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের আরও এক তারকার পতন। ‘দোস্ত দুশমন’, ‘দ্য রেইন’, ‘বাহাদুর, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’-এর মতো সুপারহিট চলচ্চিত্রের প্রাণ; সত্তর-আশির দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ওয়াসিম আর নেই। নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে শারীরিক অবস্থার বেশি অবনতি ঘটলে ওয়াসিমকে গুলশানের শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দিবাগত রাত ১টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
রাজধানীর শাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান সারাবাংলাকে তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের আরেক কিংবদন্তীকে আজ আমরা হারালাম। আামাদের চলচ্চিত্রাঙ্গন ক্রমেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে।
জায়েদ জানান, তিনি করোনায় মারা যাননি।
চলচ্চিত্রাঙ্গনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়াসিম বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। মস্তিস্ক, স্নায়ুতন্ত্র ও হৃদরোগের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া যায়নি তাকে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দেশের বাইরেও নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেকটা সুচিকিৎসা না পেয়েই এমন একজন তারকাকে পৃথিবী ছাড়তে হলো বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।
মোহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম নায়ক হিসেবে রূপালি পর্দায় আসেন নায়ক ওয়াসিম। সিনেমাটি ব্যবসাসফল হলে সুপারস্টার হয়ে উঠেন তিনি। এরপর ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া এস এম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ সিনেমা তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।
১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন তিনি। ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা ছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনে ১৫২টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- দ্য রেইন, ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, কে আসল কে নকল, বাহাদুর, দোস্ত দুশমন, মানসী, দুই রাজকুমার, সওদাগর, নরম গরম, ইমান, রাতের পর দিন, আসামি হাজির, মিস লোলিতা, রাজ দুলারী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন, জীবন সাথী, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, বানজারান।
তিনি অলিভিয়া, অঞ্জু ঘোষ ও শাবানার সঙ্গে বেশি সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘দি রেইন’ সিনেমায় নায়িকা ছিলেন অলিভিয়া। এরপর ‘বাহাদুর’, ‘লুটেরা’, ‘লাল মেম সাহেব’, ‘বেদ্বীন’ সিনেমায় অলিভিয়ার সঙ্গে অভিনয় করেন। ‘রাজ দুলালী’ ছবিতে শাবানার সঙ্গে অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলে। অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে অভিনয় করেছেন- ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘আবেহায়াত’, ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’, ‘পদ্মাবতী’, ‘রসের বাইদানী’সহ বেশকিছু সিনেমায়।
যে কারণে আড়ালে ছিলেন:
চিত্রনায়ক ওয়াসিম ২০১০ সালের পর থেকে এফডিসিতে যান না, যোগ দেন না কোনো টিভি অনুষ্ঠানেও। লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন এক সময়ের সুপারহিট এ নায়ক। এই আড়ালে চলে যাওয়ার গল্পটাও মর্মস্পর্শী। অল্প সময়ের ব্যবধানে স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে হারানোর শোক সহ্য করতে না পেরেই নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন এই অভিনেতা। ২০০০ সালে তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যু ঘটে। ২০০৬ সালে তার কন্যা বুশরা আহমেদ চৌদ্দ বছর বয়সে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। স্ত্রী আর কন্যার অকাল মৃত্যু ওয়াসিমের জীবনে বিষাদ নেমে আসে। সব কিছু থেকে দূরে সরে যান তিনি।
বেছে নিয়েছিলেন একাকী জীবন। ওয়াসিমকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল ২০০৯ সালে জীবন রহমান পরিচালিত ‘কাঁকন দাসী’ ছবিতে। তবে এই ছবির নির্মাণ কাজ আর শেষ হয়নি। ঢাকাই সিনেমার শক্তিমান এক নাম ওয়াসিম। ‘৭০’ ও ‘৮০’ দশকের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। নায়ক হিসেবে তার ছিল দুর্দান্ত সাফল্য। সেই সোনালী যাত্রার সমাপ্তি হলো ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে। রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। তার মৃত্যুর খবরে শোক নেমেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ১৯৭২ সালে মুক্তি পায় ওয়াসিমের প্রথম সিনেমা। এরপর প্রায় দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।