শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রকাশিত: সোমবার, এপ্রিল ৫, ২০২১
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী বাংলা বাজারে গাড়িঘোড়া যাতায়াত ও সাধারন মানুষ চলাচলের সড়ক দখল করে বসানো হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক ভ্যান দোকান। গাড়িঘোড়া যাতায়াত এবং মানুষের চলাচলের চাপ অতিরিক্ত হওয়ার ফলে সড়কটি সংষ্কার করে উন্নয়ন করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। একদিকে সড়কের সংষ্কার অন্যদিকে সড়কের ওপর দোকান বসানোর ফলে গাড়িঘোড়া চলাচল দুরের কথা, সাধারন মানুষের চলাচল করাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে
স্থায়ী কাউন্সিলরের নাম ভাঙ্গিয়ে তার অনুসারীরা দোকানগুলো বসিয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। তার নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করে বেড়ালেও এখনকার অনেক বিষয়ে অবাগত নয় তিনি। এসব দোকান থকে মাসে আদায় করা হচ্ছে প্রায় ৯ লাখ টাকা, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। দোকানগুলো উচ্ছেদ করতে এসে ২০১৯ সালের (১৪ মে) হামলার শিকার হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। হামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাংচুরসহ কয়েকজন আহত হয়। এরপর থেকে দোকানগুলো বন্ধ থাকলেও বর্তমানে একটি সিন্ডিকেট পুনরায় দোকানগুলো বসিয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে চলছে। এসব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত বছরের পহেলা জানুয়ারিতে খুন হয় হকার্স লীগের রিপন নামে এক যুবক। বায়েজিদের মারামারি খুনোখুনির নেপথ্যে চাঁদাবাজি-দখলবাজির আধিপত্য বিস্তার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় জানান, কাউন্সিলর এবং পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে দোকানগুলো বসিয়েছে জান্নাত বেগম প্রকাশ (পুলিশের বউ), ডিস জাবেদ, আলাল,আবুল হোসনে, আল আমিন, শাহাদাত, শাহাদাত, রুবেল, ডিব্বা আনোয়ার, বরিশালের কবির এবং ইসমাইল সিন্ডিকেট। তবে এখানকার অনেক অপকর্ম ও দোকনিদের থেকে জোরপূর্বক টাকা আদয় এবং অত্যাচারের বিষয়ে অবগত নয় কাউন্সিলর। ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িবহরে হামলার পর থেকে এখানে কোন দোকান বসাতে দেয়নি পুলিশ। কেউ বসানোর সাহসও পায়নি।
ছোট-বড় অনুযায়ী প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক পুলিশের জন্য তোলা হয় ৫০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকা চাঁদা। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব চাঁদা আদায় করা হলেও অবাগত নয় পুলিশ! বিদ্যুৎ সংযোগ এবং পানি বাবদ তোলা ৬০ থেকে ৮০, ঝাড়ুদার-দারোয়ান বাবদ তোলা হয় ২০ টাকা। এছাড়াও যদি কোন দোকান স্থান পরিবর্তন করেন, তাহলে গুনতে হয় আরও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। নতুন করে পুনরায় প্রতিটি দোকানি থেকে অগ্রিম চাঁদা নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা করে। যারা চাঁদা দিতে অপারাগত প্রকাশ করছেন তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের দোকান। আবার অনেকের থেকে আদায় করা হচ্ছে জোরপূর্বক। এসব চাঁদার টাকা ভাগাবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন তাদের পুরো সিন্ডিকেট। জান্নাতের রয়েছে বিশাল এক ল্যাডি গ্যাং। কেউ কিছু বললে এদেরকে দিয়ে ফাঁসিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। যার ফলে কেউ কিছু না বলে তার এসব সহ্য করছেন।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকাল যাতায়াত করা এক পথচারী জানান, একটি পোশাক কারখানায় চাকরির সুবাদে প্রতিনিয়ত এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। সড়কের ওপর দোকানগুলো বসানোর ফলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দোকানগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছে গাড়িঘোড়া দুরের কথা, সাধারন মানুষ চলাচল করাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এগুলো নিয়ে অনেক ঝগড়া বিবাদও হয়েছিল। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান ধরে আছে।
তবে জান্নাত মুঠোফোনে চাঁদা তোলার ষিয়টি অস্বীকার করে বলেন, আপনি সামনাসমনি এসে কথা বলেন। চাঁদা তোলার বিষয় নিয়ে কথোপকথনের একটি ভয়েসে রেকোর্ড আমাদের হাতে আছে বললে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর শাহদে ইকবাল জানান, সড়কে যান চলাচলে সমস্যা ছলি। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সড়ক উন্নয়নরে কাজ চলছে। সেখানে অবৈধভাবে কোনো দোকানপাট চালানোর সুযোগ নইে। বিষয়টি মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট র্কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খুব দ্রুত সমেয়র মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন,
আমার নাম ভাঙিয়ে যদি চাঁদাবাজি বা বেআইনি কোনো কাজ হয়, তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোর্পদ করার জন্য আমি এলাকাবাসীকে অনুরোধ করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, একাধিক ব্যক্তি আমাদের হাতে আটক হয়েছে শুধুমাত্র থানা, ওসি ম্যানেজের কথা বলে চাঁদাবাজির অভিযোগে। এ ক্ষেত্রেও আমাদের একই অবস্থান। থানার কথা বলে কেউ কোনো অবৈধ সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে চাইলে, তাকে পুলিশে সোপর্দ করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।