মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, মে ৬, ২০২১
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
নগরীর হালিশহর থানার চৌচালা এলাকায় এক বছর আগে মাটি খননকালে মানুষের একটি কঙ্কাল পায় শ্রমিকরা। সেই কঙ্কালের সূত্র ধরে অবশেষে সেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই জানিয়েছে, উদ্ধার করা ওই কঙ্কালটি নীলফামারী জেলার গৌড়ঘাট আজিজিয়া এলাকার আজিজিয়া রহমানের ছেলে রুবেলের। তিনি হালিশহর চৌচালা এলাকায় জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতেন এবং সুদে টাকা লাগাতেন।
সুদের টাকা নিয়ে সোহরাব হোসেন নামে আরেক চাষীর সাথে রুবেলের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রুবেলকে খুন মাটি চাপা দেন সোররাব। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এরপর দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে রুবেলের হত্যা রহস্য উদঘাটন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমার নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘাতক সোহরাবকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে গ্রেপ্তার করে আজ চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ঘাতক সোহরাব রুবেল হত্যায় দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পিবিআই জানায়, ২০২০ সালের ২ মার্চ হালিশহর থানাধীন চৌচালা এলাকায় ওয়াসার শ্রমিকরা মাটি খননকালে কঙ্কাল দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ওই কঙ্কাল উদ্ধার করে। এরপর কঙ্কালটি রুবেলের হতে পারে বলে পুলিশকে জানান তার আপন ভাই সামছু। পুলিশ ভিকটিমের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে। সম্পর্ক মিলিয়ে দেখতে সামছু’র ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়৷ পরে সিআইডি’র ফরেনসিক ল্যাবে দুজনের ডিএনএ নমুনা মিলে যায়।
এদিকে কঙ্কাল উদ্ধারের কয়েকমাস আগে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর রুবেল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় হালিশহর থানায় একটি জিডিও করেন ভিকটিম রুবেলের পরিবার।
গ্রেপ্তারের পর ঘাতক সোহরাব পিবিআই কর্মকর্তাদের জানান, তার বাড়ি লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা থানার পূর্ব সিন্দুণা গ্রামে। ৬ বছর আগে সপরিবারে চট্টগ্রামের হালিশহর চৌধুরীপাড়ার চৌচালা এলাকায় আসেন। এরপর তিনি সেখানে বিভিন্ন জনের জমিতে বর্গা চাষ শুরু করেন। একই এলাকায় জমি বর্গা চাষ করতেন ভিকটিম রুবেলও। সেই সুবাদে দুজনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে।
রুবেল জমি চাষ করার পাশাপাশি সুদে টাকা লাগিয়ত করতেন। একসময় রুবেলের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা সুদে নেন সোহরাব। পরে সোহরাব তার অন্যান্য বন্ধুদের জন্য রুবেলের কাছে থেকে ২৮ হাজার টাকা সুদে নিয়ে দেন। সোহরাবের কাছে এ টাকা একত্রে ফেরত চায় রুবেল। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়।
এক পর্যায়ে ভিকটিম রুবেল কোদাল দিয়ে সোহরাবের হাত, পা ও পিঠে আঘাত করেন। এসময় সোহরাবও তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রুবেলের মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মারা যান রুবেল। এরপর গর্ত খুড়ে রুবেলকে মাটিচাপা দেন সোহরাব। ভিকটিম রুবেলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিয়ে ঘটনার পরে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেন সোহরাব।
পিবিআই’র চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল বুধবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকা থেকে ঘাতক সোহরাবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় ভিকটিমের মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়৷