শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রকাশিত: শনিবার, মে ১৩, ২০২৩
জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার :::
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
কক্সবাজার উপকূলের দিকে ১৭০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে ঘূণিঝড় ‘মোখা’। শনিবার (১৩মে) সন্ধ্যায় কক্সবাজার ও এর কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায় এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে। তাই সম্ভাব্য বিপদ সামনে দেখে ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনছে স্থানীয় প্রশাসন।
শনিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কক্সবাজারের নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, মহেশখালীর ধলঘাটা, সোনাদিয়া, ঘড়িভাঙ্গা ও কুতুবজোম, টেকনাফ বাহারছড়া ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে কমপক্ষে অর্ধলাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে রক্ষা পেতে শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অর্ধলাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সকাল থেকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার পর উপকূলের মানুষ আসতে শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত অর্ধলাখ মানুষ এসেছেন। আরও অনেকেই আসবেন।’
এর আগে, শুক্রবার দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে থেমে থেমে রাত ১টা পর্যন্ত চলে। শনিবার সকাল থেকে মোখার প্রভাবে আবারও থেমে থেমে বৃষ্টি ও ধমকা হাওয়া চলছে।
কক্সবাজার পৌর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘আমাদের ঘরগুলো সাগরতীরে হওয়ায় যে কোন দুর্যোগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে। তাই প্রাণ বাঁচাতে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আগে থেকে চলে আসছি। আল্লাহ জানে এই ঘূর্ণিঝড়ের পরিণতি কি হয়।’
একই কথা বললেন মরিয়ম নামে এক নারী। তিনি জানান, তার ছোট সন্তান রয়েছে। এখানে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে ভালো লাগছে। তবে সকাল থেকে কিছু খাননি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে মোখার আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের দুই দিক যেহেতু খোলা এবং পানি চলাচল করে, তাই বড় ধরনের কোনও ক্ষতির শঙ্কা নেই। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার সব আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এদিকে, জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় সিসিপির ৮ হাজার ৬০০ জন এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। সেন্টমার্টিনে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশের ভবনসহ ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। তাই সেখানে সরকারি স্থাপনাগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগকালে ২০ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ১০ লাখ উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ৫ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩ দশমিক ৪ মেট্রিক টন শুকনো কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন এবং ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলায় যে ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেগুলোতে ৫ লাখ ৫ হাজার ৯৯০ জন মানুষ থাকতে পারবে।
শনিবার সকাল থেকে মেডিক্যাল দল, কোস্টগার্ড, নৌ বাহিনী, পুলিশ, নৌ পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।