সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রকাশিত: শনিবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
জিয়া চৌধুরী, সংযুক্ত আরব আমিরাত:
আভ্যন্তরীন ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত বাংলাদেশি সাধারণ শ্রমিকরা। দেশটিতে বাংলাদেশিদের নতুন শ্রমিক ভিসা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তার উপর ভিসা পরিবর্তন করতে না পারার কারণে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিতে বাংলাদেশিদের ভাল চাকরির সুযোগ থাকলেও সেসব প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না তারা। যার ফলে অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই শ্রমবাজার। ভিসা পরিবর্তনের জটিলতার কারণে দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে চাকরি হারানো বাংলাদেশি শ্রমিকদের।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। আর এই রেমিটেন্সের সবোর্চ্চ যোগানদাতা আরব আমিরাত প্রবাসীরা। এই দেশে প্রায় দশ লক্ষ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। নতুন শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকায় ও ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
প্রবাসী ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘ অনেক বছর ধরেই আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশে বাংলাদেশি সাধারণ শ্রমিকদের নতুন ভিসা ইস্যু ও ভিসা পরিবর্তন বন্ধ রয়েছে। দুবাইয়ে কেবল মাত্র স্কিল এমপ্লয়মেন্ট ভিসা যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ম্যানেজারিয়াল পোষ্টগুলোতে নতুন ভিসা পাওয়া যাচ্ছে এবং ভিসা পরিবর্তন করা যাচ্ছে। দুবাই ছাড়া অন্যান্য প্রদেশগুলোতে দক্ষ অদক্ষ কোন বাংলাদেশিই ভিসা পরিবর্তন করতে পারছেন না। এদেশে পার্টনার ভিসা বা ইনভেস্টর ভিসা, স্কিল এমপ্লয়মেন্ট ভিসা, ট্যুরিষ্ট ভিসা, ফ্যামেলি ভিসা, গোল্ডেন ভিসা এসব ভিসা চালু থাকলেও সাধারণ শ্রমিকদের এসব ভিসা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সাধারণ শ্রমিকদের ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিভিন্ন কোম্পানির মালিকরা বাংলাদেশিদের কম বেতনে চাকরী করতে বাধ্য করছেন কিংবা নিয়মিত বেতন আদায় না করেও কাজ করতে বাধ্য করছেন। আরব আমিরাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুপার মার্কেট, হোটেল রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ কোম্পানী, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী, গ্যারেজ সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিতে বাংলাদেশী শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও শ্রমিক ভিসা চালু না থাকায় দেশ থেকে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য সেলসম্যান, ক্লিনার, ওয়েটার, হেল্পার সহ এধরনের সাধারণ কাজে নতুন শ্রমিক আনা সম্ভব হচ্ছে না। তার উপর বাংলাদেশীদের ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় দেশটিতে কর্মরত শ্রমিকরাও এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানিতে ভিসা পরিবর্তন করতে পারছেন না। যার ফলে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে যেমন বাংলাদেশি শ্রমিক পাচ্ছে না অন্যদিকে বাংলাদেশি কোন শ্রমিকের চাকরি চলে গেলে তাকে নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসতে হচ্ছে।
আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাস্ট্রদুত আবু জাফর জানান, ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে ভিসা বের করার কারণে এখন প্রকৃতপক্ষে যারা কাজ করতে আসতে চায় তারাও ভিসা পাচ্ছেনা। বাংলাদেশিদের ভিসা চালু আছে। তবে নানাভাবে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। নতুন করে পুরোপুরি ভিসা খুলে দিলে বিভিন্ন অসাধু চক্র আবারও তার অপব্যবহার করবে।
দেশের রেমিটেন্স সংকটকালে আরব আমিরাতের প্রদেশগুলোতে অন্তত আভ্যন্তরীন ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ তৈরী করতে প্রয়োজনীয় কুটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছেন আরব আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।